অনিন্দিতার করোনা যুদ্ধ

Author : বরেন চক্রবর্তী

List Price: Tk. 725

Tk. 544 You Save 181.25 (25%)

অনিন্দিতা নামের একটি মেয়ে জেনে গেছে ওর বাবার ফুসফুসের চুরানব্বই ভাগ জায়গা করোনা গ্রাস করেছে। ডাক্তাররা বলে গেছে রোগীর বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা দশ ভাগেরও কম। কিন্তু মেয়েটি আশা ছাড়ে না। ওই দশ ভাগ চান্সকে আতশকাচের মাঝ দিয়ে তাকিয়ে অনেক বড় করে দেখতে থাকে মেয়েটি। ওর কাছে শতকরা দশ ভাগ কোনো নিছক সংখ্যা নয়, ওর বাবার ভালো হয়ে ওঠার সুস্পষ্ট ইশারা। অনির চারপাশের পৃথিবীতে প্রতিদিন কী ঘটছে তা ও জানে না, জানতেও চায় না। এদিকে বিশ্বময় ক্রমেই ক্ষুধাতুর হয়ে উঠছে করোনা নামের এই সর্বনাশা ভাইরাস। জল-স্থল আর অন্তরীক্ষ সবকিছু দখল করে নিয়েছে করোনা নামের এক অদৃশ্য শত্রু। ডাক্তারদের কাছে কোনো বিহিত নেই, ওষুধ নেই। রোগের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে যথার্থ কোনো উত্তর নেই। অক্ষমতার সংকোচে একজন মানুষের চোখ-মুখ যেমন দেখা যাওয়া উচিত ঠিক তেমনি দেখতে প্রতিটি ডাক্তারের মুখাবয়ব। বিশ্বব্যাপী অনড় অটল হয়ে এতদিন দাঁড়িয়ে থাকা বিজ্ঞানের জয়স্তম্ভের উৎসে দেখা দিয়েছে এক ভয়াবহ ফাটল। শতাব্দীর অহংকারের দর্প চূর্ণ হয়েছে। মানবসভ্যতা যেন এই অণু দানবের সামনে একেবারে হাঁটু গেড়ে নুয়ে পড়েছে। এক ঘোর অশ্লেষা আর ত্র্যহস্পর্শের ছোঁয়া লেগেছে যেন অনিদের চারজনের সংসারে। বাবা-মা দুজন একসাথে হাসপাতালে, একই অসুখে। বাবা কি বাঁচবে, এ কথাটা যেন শক্তিশেলের মতো বিঁধে আছে মেয়েটির তাবৎ সত্তায়। বাবা কেমন আছে তা ডাক্তারদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা মহাকালের মতো নিরুত্তর নিরুচ্চার হয়ে যায়। এই শব্দহীনতার অর্থ অনি বোঝে। কিন্তু তা ও মানতে পারে না। বাড়ির কারুর জ¦র হলে চিরচেনা মানুষটিও তার আশপাশে থাকতে চায় না। মানুষটি আপন কিন্তু অসুখটি তো আর আপন না। স্বামী চলে যায় স্ত্রীকে ছেড়ে, স্ত্রী স্বামীকে, ভাই আসে না বোনকে একনজর দেখতে, পরম আত্মীয়ও একবার হাসপাতালে রোগীর খবর নিতে আসে না। কিন্তু সব সমীকরণ ব্যর্থ করে দিয়ে বারো নম্বর বেডের রোগীর মেডিক্যাল কলেজে শেষ বর্ষে পড়–য়া মেয়ে অটল অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাবার পাশে অষ্টপ্রহর। হাইফ্লোর তরঙ্গায়িত বাতাসে এই অণুদানব ঘুরে ফেরে সহজ শিকারের লোভে। চকিত বেখেয়াল হলেই আর উপায় নেই। সর্বনাশ এসে বাসা বাঁধবে অনির নিজের বুকের ভিতর আর ফুসফুসের প্রতিটি কোষে। নিজের মৃত্যুভয়কে আদৌ কোনো আমলেই নেয়নি এই মেয়ে। করোনা ভবনের সবচেয়ে ভয়দ ওয়ার্ড এই আইসিইউ। এখানে মৃত্যুবেশী করোনার রক্তলোহিত দক্ষিণ হস্তটি প্রতিটি বেডে ঘুরে বেড়ায় অহর্নিশ, কখন কাকে সে স্পর্শ করে তা কেউ ঠাহর করতে পারে না। কিন্তু অনি সদা সজাগ, করোনার হিমশীতল হাতের স্পর্শ যেন ওর বাবার শরীরে না লাগে সে জন্য ও জেগে থাকে বাবার পাশে সারাক্ষণ জাগরীর মতো। এই মেয়েটি ওর বাবাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য বুকের মধ্যে অবিনাশী আশা নিয়ে অহোরাত্র বসে থাকে বাবার বেডের পাশে। একদিকে বাবা আরেক দিকে মৃত্যু─এই দুইয়ের মাঝে অবিনাশী ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দিতা নামের এই মেয়েটি। প্রমেথিউজ যেমন করে মানবকল্যাণে স্বর্গ থেকে দেবতাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আগুন চুরি করে নিয়ে এসেছিল মর্ত্যে ঠিক তেমনি অনিন্দিতা নামের এই মেয়েটি যমরাজ্য থেকে শবের মিছিল ডিঙিয়ে জীবিত বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চায়। সে ওর বড় ভাইকে কথা দিয়েছে যে করেই হোক সে তার বাবাকে দাদার কাছে ফিরিয়ে নেবেই। ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা আর ধনুর্ভঙ্গ পণ নিয়ে এই মেয়েটি এই করোনা ওয়ার্ডে থিতু হয়ে গেছে। করোনা আইসিইউ’র ভিতর সারা দিনরাত চলছে নিয়তির সাথে অনিন্দিতার নিত্য দ্বৈরথ। দেড় মাস ধরে এই মেয়েটি ওর বাবাকে নিয়ে করোনার সাথে খেলে যাচ্ছে জীবন-মৃত্যুর এক অসম গোপন খেলা।

Title অনিন্দিতার করোনা যুদ্ধ
Author বরেন চক্রবর্তী
Publisher অবসর প্রকাশনা সংস্থা
ISBN 9789848800195
Edition ১ম প্রকাশ, ২০২২
Number of Pages 288
Country Bangladesh
Language বাংলা
baren_chokroborti.jpg

বরেন চক্রবর্তী

সমসাময়িক সাহিত্য অঙ্গনে বরেন চক্রবর্তী একটি বহুমুখী প্রতিভা। ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই তিনি লিখতে পারেন অনায়াসে। তিনি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপন্যাস ‘রাশিয়ার মেয়ে’র লেখক। বিভিন্ন বিষয়ে এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ৪০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনি দুই বাংলাতেই সমানভাবে সমাদৃত। বড় ক্যানভাসে তাঁর লেখা ট্র্যাভেলগ ‘ভেনাস ল্যুভর ও অন্নপূর্ণার দেশে’ (২০০৭), ‘পিকাসাের রঙ-মাইকেলাঞ্জেলাের হাতুড়ি’ (২০১০), ‘আইনস্টাইনের বাড়ি-ভ্যানগঘের হলুদ ভুবন’ (২০১১), ‘ভিঞ্চির ভােজ মাতিসের নাচ (২০১৫), রাশিয়ার শিল্পসাহিত্য-পাখির চোখে দেখা’ (২০১৭) ও ‘পেইন্টিংয়ের ক্রমবিকাশ ও আমার দেখা সেরা দশ’ (২০১৮) বাংলা সাহিত্যে এক অনন্যসাধারণ সংযােজন। ট্র্যাভেলগ লেখার চিরাচরিত প্রথা ভেঙে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন এবং সেই রচনাশৈলী একান্তই তাঁর নিজস্ব ও মৌলিক। তাঁর প্রতিটি লেখায় নিয়ত একটা প্রবাহ থাকে, যা চলতেই থাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, তাই পাঠক তাঁর লেখা পড়ে কখনাে হোঁচট খায় না। তাঁর লেখা রােমান্টিক গ্রন্থ ‘উপদংশ’ (১৯৯৪), ‘গুণিন’ (১৯৯৮), ‘পুতুল বিষয়ক জটিলতা (১৯৯৮), ‘লুসিয়ানা’ (২০০৩), ‘ভালবাসার সালতামামি’ (২০০৪), ‘বৃষ্টিভেজা রােদ ও একাকী দুজন’ (২০০৬), ‘Sounds of Solitude' (২০০৬), ‘পুরুষােত্তম প্রিয়’ (২০০৭), “যে তুমি নিরন্তর’ (২০০৯), ‘নেভাপাড়ের মেয়ে’ (২০১১), ‘স্বর্ণকুন্তলা’ (২০১২) ও ‘দূরবর্তিনী’ (২০১৩) সর্বশ্রেণির পাঠকের মনে রেখাপাত করেছে। ইংরেজিতে লেখা তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতার বই ‘Road Number Thirty Two' (2006), “Thy Name is Freedom' (2030), “Clarinet of Seventh March (২০১২) ও ‘A Nation Confesses’ (২০১৪) দেশ-বিদেশের ঋদ্ধ পাঠকদের কাছে হয়েছে প্রশংসিত। নারী মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘ক্রান্তিকাল’ (২০০০), ‘মুক্তি উপাখ্যান’ (২০০২) ও তামস’ (২০০৮) সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে মৌলিক ও অনন্য সংযােজন। বাংলা সাহিত্যে নারী মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে লেখা একমাত্র ট্রিলজি ‘তিন কন্যার মুক্তিযুদ্ধ’ (২০০৯)-র রচয়িতা তিনি। ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি একাডেমিক বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দিল্লি থেকে etaforo os 6184 ‘Textbook of Basic and Advanced Electrocardiography' (২০২০) বইটি এশিয়া, ইউরােপ এবং আমেরিকাসহ ত্রিশটি ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রদের কাছে সমাদৃত। আন্তর্জাতিক নিরিখেই এত বিষয়ে লিখিত বড় পরিসরের পাঠ্য বইগুলাের মধ্যে এটি অন্যতম।

বরেন চক্রবর্তী লেখাপড়ার পাশাপাশি দৈনিক সংবাদ ও ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। আশি ও নব্বই দশকে সাপ্তাহিক রােববার, বিচিত্রা ও সচিত্র সন্ধানীর অনেক জনপ্রিয় প্রচ্ছদকাহিনির রচয়িতা তিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়া অবস্থাতেই সংগীতপ্রিয় এই লেখক উত্তীর্ণ হন ছায়ানট সংগীতবিদ্যায়তন থেকে। তিনি ইতিমধ্যে আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ান্সের শ্রেষ্ঠ মুখবন্ধ পুরস্কার-১৯৯৩, সিঙ্গাপুর কার্ডিয়াক সােসাইটির শ্রেষ্ঠ গবেষক পুরস্কার-১৯৯৪, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণামূলক উপন্যাস রচনার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার-২০০৯, হেলথ অ্যাওয়ার্ড-২০১০, বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০১২, একুশে পদক-২০১২ এবং সিটি আনন্দ আলাে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস পুরস্কার-২০১৩ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সাহিত্য তার নেশা, পেশা নয়। স্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গাইনােকোলজিস্ট অধ্যাপক (ডা.) শিখা গাঙ্গুলি চন্দনা, এক ছেলে, এক মেয়ে ডা. সুদিপন ও ডা. অনিন্দিতাকে নিয়ে লেখকের সংসার।


Submit Your review and Ratings

Please Login before submitting a review..