সমসাময়িক সাহিত্য অঙ্গনে বরেন চক্রবর্তী একটি বহুমুখী প্রতিভা। ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই তিনি লিখতে পারেন অনায়াসে। তিনি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপন্যাস ‘রাশিয়ার মেয়ে’র লেখক। বিভিন্ন বিষয়ে এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ৪০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনি দুই বাংলাতেই সমানভাবে সমাদৃত। বড় ক্যানভাসে তাঁর লেখা ট্র্যাভেলগ ‘ভেনাস ল্যুভর ও অন্নপূর্ণার দেশে’ (২০০৭), ‘পিকাসাের রঙ-মাইকেলাঞ্জেলাের হাতুড়ি’ (২০১০), ‘আইনস্টাইনের বাড়ি-ভ্যানগঘের হলুদ ভুবন’ (২০১১), ‘ভিঞ্চির ভােজ মাতিসের নাচ (২০১৫), রাশিয়ার শিল্পসাহিত্য-পাখির চোখে দেখা’ (২০১৭) ও ‘পেইন্টিংয়ের ক্রমবিকাশ ও আমার দেখা সেরা দশ’ (২০১৮) বাংলা সাহিত্যে এক অনন্যসাধারণ সংযােজন। ট্র্যাভেলগ লেখার চিরাচরিত প্রথা ভেঙে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন এবং সেই রচনাশৈলী একান্তই তাঁর নিজস্ব ও মৌলিক। তাঁর প্রতিটি লেখায় নিয়ত একটা প্রবাহ থাকে, যা চলতেই থাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, তাই পাঠক তাঁর লেখা পড়ে কখনাে হোঁচট খায় না। তাঁর লেখা রােমান্টিক গ্রন্থ ‘উপদংশ’ (১৯৯৪), ‘গুণিন’ (১৯৯৮), ‘পুতুল বিষয়ক জটিলতা (১৯৯৮), ‘লুসিয়ানা’ (২০০৩), ‘ভালবাসার সালতামামি’ (২০০৪), ‘বৃষ্টিভেজা রােদ ও একাকী দুজন’ (২০০৬), ‘Sounds of Solitude' (২০০৬), ‘পুরুষােত্তম প্রিয়’ (২০০৭), “যে তুমি নিরন্তর’ (২০০৯), ‘নেভাপাড়ের মেয়ে’ (২০১১), ‘স্বর্ণকুন্তলা’ (২০১২) ও ‘দূরবর্তিনী’ (২০১৩) সর্বশ্রেণির পাঠকের মনে রেখাপাত করেছে। ইংরেজিতে লেখা তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতার বই ‘Road Number Thirty Two' (2006), “Thy Name is Freedom' (2030), “Clarinet of Seventh March (২০১২) ও ‘A Nation Confesses’ (২০১৪) দেশ-বিদেশের ঋদ্ধ পাঠকদের কাছে হয়েছে প্রশংসিত। নারী মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘ক্রান্তিকাল’ (২০০০), ‘মুক্তি উপাখ্যান’ (২০০২) ও তামস’ (২০০৮) সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে মৌলিক ও অনন্য সংযােজন। বাংলা সাহিত্যে নারী মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে লেখা একমাত্র ট্রিলজি ‘তিন কন্যার মুক্তিযুদ্ধ’ (২০০৯)-র রচয়িতা তিনি। ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি একাডেমিক বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দিল্লি থেকে etaforo os 6184 ‘Textbook of Basic and Advanced Electrocardiography' (২০২০) বইটি এশিয়া, ইউরােপ এবং আমেরিকাসহ ত্রিশটি ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রদের কাছে সমাদৃত। আন্তর্জাতিক নিরিখেই এত বিষয়ে লিখিত বড় পরিসরের পাঠ্য বইগুলাের মধ্যে এটি অন্যতম।
বরেন চক্রবর্তী লেখাপড়ার পাশাপাশি দৈনিক সংবাদ ও ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। আশি ও নব্বই দশকে সাপ্তাহিক রােববার, বিচিত্রা ও সচিত্র সন্ধানীর অনেক জনপ্রিয় প্রচ্ছদকাহিনির রচয়িতা তিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়া অবস্থাতেই সংগীতপ্রিয় এই লেখক উত্তীর্ণ হন ছায়ানট সংগীতবিদ্যায়তন থেকে। তিনি ইতিমধ্যে আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ান্সের শ্রেষ্ঠ মুখবন্ধ পুরস্কার-১৯৯৩, সিঙ্গাপুর কার্ডিয়াক সােসাইটির শ্রেষ্ঠ গবেষক পুরস্কার-১৯৯৪, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণামূলক উপন্যাস রচনার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার-২০০৯, হেলথ অ্যাওয়ার্ড-২০১০, বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০১২, একুশে পদক-২০১২ এবং সিটি আনন্দ আলাে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস পুরস্কার-২০১৩ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
সাহিত্য তার নেশা, পেশা নয়। স্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গাইনােকোলজিস্ট অধ্যাপক (ডা.) শিখা গাঙ্গুলি চন্দনা, এক ছেলে, এক মেয়ে ডা. সুদিপন ও ডা. অনিন্দিতাকে নিয়ে লেখকের সংসার।