
fvxdgdthdfjngnghf
Category:
Published: 20 jan 2020
পাঠ্যবইয়ের চিত্রশিল্পী হাশেম খানের গল্প
Category: লেখক কুঞ্জ
Published: 20 jan 2020
হাশেম খান, বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী। তিনি ১৯৯২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০১১ সালে হাশেম খানকে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা পদক পুরস্কার প্রদান করে। বরেণ্য এই শিল্পী চিত্রকলার পাশাপাশি মূল্যবান অবদান রেখেছেন উন্নত মানের প্রচ্ছদ, বই-নকশা, পোস্টার, লোগো ডিজাইন ইত্যাদি রুচিশীল নির্মাণে। পাঠ্যবইয়ে তার অলংকরণের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আসুন এক ঝলকে জেনে নিই, পাঠ্যবইয়ের চিত্রশিল্পী হাশেম খানের, হাশেম খান হয়ে ওঠার গল্প।
যেভাবে শুরু
ছবি আঁকার বিষয়টি পেয়েছিলেন তাঁর বড় ভাই সোলেমান খানের কাছ থেকে। বাবা তাদের দুজনের জন্য রিক্সের একটি রঙিন বাক্স দিয়েছিলেন। এটিই ছিল ছবি আঁকার একমাত্র সম্পদ। তখন থেকেই তিনি সমস্ত খাতার পৃষ্ঠাজুড়ে নানা ছবি এঁকে ভরে রাখতেন। সেখান থেকেই শুরু।
পড়াশোনা
হাশেম খান বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছিলেন। পরিবারের সবার ইচ্ছা ছিল তাকে ডাক্তার বানাবেন। তার বড় ভাই তখন ম্যাট্রিক পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি জ্ঞানে-গুণে হাশেম খানের চেয়ে বেশি ছিলেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় হাশেমের রেজাল্ট তেমন ভালো হয়নি। বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়েন। আর তখনই বড় ভাইয়ের আগ্রহে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন।
টানাপোড়ন
১৯৫৬ সালে ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর হাশেম থাকতেন তার ফুফাতো বোনের বাসায়। বোনের নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকে প্রচণ্ড সাহায্য করেছিলেন। তখন তার রংতুলি কিছুই ছিল না। আর্থিকভাবে খুব কষ্টে ছিলেন। হাশেমের শিক্ষক ছিলেন শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। তিনি হাশেমকে একদিন বললেন- তুমি টিফিন আওয়ারের পর ক্লাসে থাক না কেন? হাশেম সেদিন তাকে সত্যি কথাটা বলতে পারেনি। হাশেমের রংতুলি কিছুই সেদিন ছিল না। ক্লাসে বসে ছবি আঁকবে কী দিয়ে। রংতুলি কেনার পয়সা নেই। দশ ভাইবোন পড়াশোনা করছে। আব্বা হয়তো টাকা দিতে পারবেন না বরং আর্ট কলেজ থেকে নিয়ে অন্য কোথাও ভর্তি করিয়ে দেবেন। এই ভয়ে হাশেম কিছু বলেননি। তিনি তখন উপার্জনের পথ খুঁজেছেন।
দৃঢ়প্রতিজ্ঞা
প্রথমবর্ষের রেজাল্ট বেরুল, তখন দেখলেন ২১ জন পাস করেছে। একজনের আগে তিনি। এটি তাকে বিশেষ পীড়া দিল। মাত্র একজনের চেয়ে তিনি এগিয়ে আছেন! তখন ভাবলেন, আমার কি ভালো হওয়ার অধিকার নেই! সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আমাকে এক নম্বরে উঠতেই হবে। পরবর্তী সময়ে তার স্বপ্ন কিছুটা পূরণ হয়েছিল।
প্রথম মুদ্রিত হাশেম খান
রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয় হাটখোলা রোডের প্যারামাউন্ট প্রেসের ইত্তেফাক অফিসে। ওই পরিচয় তাকে একটা বিরাট সুযোগ করে দিল। আগে থেকে লেখালেখির অভ্যাস ছিল। চাঁদপুরে থাকতে দাদাভাইকে লেখা ও ছবি পাঠিয়েছিলেন বহুবার; কিন্তু তিনি সেগুলো ছাপতেন না। ইত্তেফাক অফিসে দাদাভাই একদিন তার লেখাগুলো বের করে বললেন- “লেখা দেখে মনে হয় কাঁচা হাতের লেখা, কিন্তু ছবি এঁকে পাশে লিখেছ টুবি রিভিউসড। একটা বাচ্চা ছেলে মফস্বলে বসে এসব জানলে কী করে?” তিনি লেখার সঙ্গে ছবি এঁকে তার পাশে ছবির সাইজ, লেখা কত কলামে হবে তা উল্লেখ করতেন। দাদাভাই তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- “তুমি কি ব্লক দেখেছ কখনো?” তিনি বললেন না। দাদাভাই বললেন- ‘তাহলে তুমি টু বি রিভিউসড লেখ কী করে?’ দাদাভাই অবাক। হাশেম বললেন, “আমি উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর লেখা পড়ে শিখেছি।” তখন ইত্তেফাকের ঈদ সংখ্যায় খুব নামকরা শিল্পী মুর্তজা বশীর এঁকেছিলেন সব ছবি। হাশেমকে দিয়েও দাদাভাই কয়েকটা অলঙ্করণ করিয়েছিলেন। তিনি তখন প্রথমবর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছেন। সেই প্রথম অলঙ্করণ শিল্পী হিসেবে তার নামও মুদ্রিত হয়।
সম্মানী ও ঋণ
একদিন দাদাভাই হাশেমকে বললেন- ‘তোমার জন্য বিল হয়েছে ১২ টাকা।’ তখন এক সের গরুর মাংসের দাম এক আনা। সেদিন বাসায় ফেরার সময় রসগোল্লা কিনে এনেছিলেন। এরপর দাদাভাইয়ের পেছনে সব সময় লেগে থাকতেন। নতুন নতুন পড়া, লেখা, ছবি আঁকা নানা বিষয়ে দাদাভাই উৎসাহ দিতেন। তার সূত্রে, মুনতাসীর মামুন, শাহাদৎ চৌধুরী, শাহরিয়ার কবীর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায়। সবাই মিলে কচিকাঁচার মেলা করতেন। দাদাভাইয়ের উৎসাহে শিশুদের জন্য ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। দাদাভাই এবং কবি হাবীবুর রহমানের কাছে হাশেম খান নানাভাবে ঋণী।